টেক্সাসে পানির জন্য 'তৃষ্ণার্ত এআই'
টেক্সাসে এআই ডেটা সেন্টারের দ্রুত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব সেন্টার প্রচুর বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করে, যা ইতিমধ্যেই পানির সংকটে থাকা টেক্সাসের জন্য উদ্বেগজনক।

টেক্সাসে এআই ডেটা সেন্টারের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এগুলোর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচের দিকে অনেক মনোযোগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু এদের সমানভাবে বিপুল পানি ব্যবহারের দিকে খুব একটা নজর দেয়া হয়নি। তবে এখন পরিষ্কার হয়ে উঠছে, যদি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পানি ব্যবহার চলতে থাকে, তাহলে খরাপ্রবণ টেক্সাসে পানির প্রাপ্যতায় গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যাবিলিন শহরের বাইরে বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এআই ডেটা সেন্টার—যা ৫০০ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল প্রকল্প 'স্টারগেট'-এর অংশ।
সম্পূর্ণ হলে 'স্টারগেট ওয়ান' প্রকল্পটি ৯৪০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হবে—যা নিউইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্কের চেয়েও বড়। পুরো ক্যাম্পাসের বিদ্যুতের চাহিদা হবে সর্বোচ্চ ১.২ গিগাওয়াট, যা এক মিলিয়ন গড়পড়তা বাড়ির বিদ্যুতের সমান।
এখানে পানির ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এআই ডেটা সেন্টার এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং সেন্টারগুলো বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করে।
পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের অধ্যাপক ই ডিং টেকসই এআই নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, 'আপনি যদি চ্যাটজিপিটিকে ১০ থেকে ৫০টি প্রশ্ন করেন, তবে সেটি প্রায় ৫০ মিলিলিটার পানি খরচ করে।' ৫০ মিলিলিটার পানি মানে এক-চতুর্থাংশ কাপ। ডিং বলেন, এভাবে যত বেশি মানুষ এআই ব্যবহার করবে, তত দ্রুত এই ছোট ছোট কাপ মিলিয়ে বিশাল পানি খরচ হয়ে যাবে।
ডিং সম্প্রতি 'সব ধরনের পানির ব্যবহার সমান নয়: টেকসই কম্পিউটিংয়ের জন্য পানির চাপ ওজনযুক্ত মেট্রিক' শীর্ষক একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যা 'হটকার্বন ২০২৫’-এ ছাপা হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন যে ডেটা সেন্টারগুলো তৈরি হয়েছে তার দুই-তৃতীয়াংশ পানির অভাবগ্রস্ত এলাকায়, যার মধ্যে টেক্সাস ও অ্যারিজোনা রয়েছে।
তিনি বলেন, 'ওপেনএআই এবং কিছু বিটকয়েন মাইনিং কোম্পানি টেক্সাসে ডেটা সেন্টার নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। অথচ টেক্সাস মূলত একটি উচ্চ পানিচাপের অঞ্চল। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যও এখানে প্রচুর পানি দরকার।'
একটি গড়পড়তা মাঝারি আকারের ডেটা সেন্টার প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ গ্যালন পানি খরচ করে, যা প্রায় এক হাজার বাড়ির দৈনিক পানির সমান। হিউস্টন অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার ও ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টন এনার্জির এক কৌশলপত্র অনুযায়ী, ২০২৫ সালে টেক্সাসের ডেটা সেন্টারগুলো প্রায় ৪৬ বিলিয়ন গ্যালন পানি ব্যবহার করবে। আর ২০৩০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৩৯৯ বিলিয়ন গ্যালন হতে পারে—যা টেক্সাসের মোট পানির ব্যবহারের প্রায় ৭%।
সান মার্কোসের দ্য মেডোজ সেন্টার ফর ওয়াটার অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক রবার্ট মেস বলেন, 'এটা বিপুল পরিমাণ পানি, এবং সত্যি বলতে এটি উদ্বেগজনক, কারণ আমরা ইতিমধ্যেই পানি সংকটে থাকা একটি অঙ্গরাজ্য।' তিনি আরও বলেন, 'কুলিংয়ের জন্য পানি চাইলে প্রথমে পর্যাপ্ত পানি তো থাকতেই হবে।'
ডেটা সেন্টার পরিচালনায় তাপ হলো সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি কার্যক্ষমতা কমায়, এমনকি পুরো সিস্টেম অচলও করে দিতে পারে। এই তাপ তৈরি হয়—অসংখ্য সার্ভার বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করার কারণে। মেস বলেন, 'আমার মনে হয় অনেক ডেটা সেন্টার বুঝতে পারবে যে সেই পানি পাওয়া খুবই কঠিন হবে, এমনকি হয়তো একেবারেই পাওয়া যাবে না। আর তখনই হয়তো তাদের ক্লোজড লুপ কুলিং ব্যবস্থায় যেতে বাধ্য হতে হবে।'
ডেটা সেন্টারের কুলিংয়ের জন্য ক্লোজড লুপ সিস্টেম অনেক পানি সাশ্রয় করে, কারণ এখানে বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়া কুলিংয়ের বাষ্পকে বাতাসে পালাতে দেওয়া হয় না। বরং সেই বাষ্পকে আবার ধরে রাখা হয় এবং বারবার ব্যবহার করা হয়।
মেস বলেন, 'এটি অনেক বেশি পানি সাশ্রয়ী। এখানে পানি লাগে অবশ্যই, তবে ওপেন লুপ কুলিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক কম।'
অ্যাবিলিনের স্টারগেট প্রকল্পের নির্মাতা কারুসো এনার্জি-র সরবরাহকৃত নথি অনুযায়ী, তারা পানি সাশ্রয়ের জন্য ক্লোজড লুপ সিস্টেম ব্যবহার করবে। কারুসো কম পানি ব্যবহারের পথ বেছে নিয়েছে, তবে সব ডেটা সেন্টার যে একই সিদ্ধান্ত নেবে তা নয়।
টেক্সাস ওয়াটার এনভায়রনমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক জুলি নারগ্যাং বলেন, ডেটা সেন্টারগুলো পরিকল্পনা পর্যায়ে থাকতেই পানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'পানি ছাড়া টেক্সাসের কোনো উন্নয়ন চমক সম্ভব নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি টেক্সাস এটিকে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং উদ্ভাবনী খাতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখে, তবে পানিকে অন্যতম প্রধান বিবেচনা করতে হবে। সেই অনুযায়ী, টেক্সাসের উচিত ডেটা সেন্টারগুলোকে পানির চাহিদা কমানোর কৌশল গ্রহণে প্রণোদনা দেয়া বা বাধ্য করা।'
তবে নারগ্যাং বলেন, টেক্সাসের পানি পরিকল্পনায় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিপুল পানি চাহিদার বিষয়টি ধরা হয়নি। তিনি বলেন,'আমাদের পানির যোগানে এত চাপ সত্ত্বেও এর জন্য ভালো পরিকল্পনা করা হয়নি। যদি এখনই না করা হয়, তবে এমন এক পানি সংকটে পড়ব যেখান থেকে নতুন কোনো উদ্ভাবন দিয়েও আর বেরোনো যাবে না।'
টেক্সাসের সবচেয়ে শুষ্ক এলাকাগুলোর দিকেই আরও বিশাল ডেটা সেন্টার আসছে।
আমারিলোর কাছে টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি এবং সাবেক জ্বালানি সচিব ও গভর্নর রিক পেরি মিলে এমন একটি এআই ডেটা সেন্টারের পরিকল্পনা করছেন, যা অ্যাবিলিনের স্টারগেটের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় হবে।
এটি আংশিকভাবে পারমাণবিক শক্তি দিয়ে চালিত হবে এবং কতটুকু পানি লাগবে তা প্রকাশ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রকল্পটির নাম হবে 'ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প অ্যাডভান্সড এনার্জি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ক্যাম্পাস।'
সূত্র: ডেন্টন ক্রনিকল